নতুন বছরের নতুন বরণ - আনিসুর রহমান সৈকত
প্রতিবারের মতো এইবারও ডিসেম্বর মাসেই বছর শেষ
হচ্ছে এবং বরাবরের মতো এইবারও জানুয়ারি মাস দিয়েই বছর শুরু হবে।পাশাপাশি বরাবরের
মতো এবারও এক রাতেই রাতারাতি বছর শেষ হয়ে যাচ্ছে।নতুন বছর আসবে এবং পুরনো বছর
যাবে, এটাই স্বাভাবিক। অথচ বছরগুলো কোথা থেকে আসছে বা যাচ্ছে এটা নিয়ে কেউই মাথা
ঘামাচ্ছে না।কোন মানে হয়? কী অদ্ভুত...
তখন দুপুর পৌনে তিনটা,কি-বোর্ডে খুটখাট করে
কিছু লিখছি। আমার মোবাইলটি টেবিলের উপর রাখা। মোবাইলের পর্দার আলো একবার জ্বলতে
আরেকবার নিভতে দেখা যাচ্ছে। জ্বলা আর নেভার মাধ্যমে সে দুটি অর্থ প্রকাশ করছে..
১/ মোবাইলটি সাইলেন্ট করা ছিলো।
২/ এবং অনেকেই তাতে কল দিচ্ছে।
আমার দুই হাত প্রবল ভাবে কি-বোর্ডের উপর
ব্যাস্ত। কল রিসিভ করতে হলে আমাকে কি-বোর্ড থেকে একটি হাত সরিয়ে মোবাইলটি তুলতে
হবে। তারপর সবুজ বাটন চেপে সেটিকে কানের কাছে ধরতে হবে। অবশ্য আমার সামনে আরও একটি
অপশন আছে- কল রিজেক্ট করা।
সত্যিকারের কোনও ব্যাস্ততা থাকলে আমি
দ্বিতীয়টাই বেছে নিতাম। কিন্তু আমার সত্যিকারের ব্যাস্ততাগুলো অনেক আগেই ভোঁতা আর
তিক্ত হয়ে গেছে। আমি সবুজ বাটনটি চেপে মোবাইলটি কানে ধরলাম। অপর প্রান্তের
অপেক্ষারত মানুষটির কণ্ঠস্বর শোনা গেল। কণ্ঠস্বরের মালিককে আমি চিনি। তার নাম
আরমান। চোখে চশমা। নাদুস-নুদুস চেহারা। সম্পর্কে সে আমার কি হয় তা জানি না,তবে
বিরাট কিছু,কাল রাতেই চাঁদপুর থেকে লক্ষ্মীপুর বেড়াতে এসে সকালেই লক্ষ্মীপুর হয়ে
সে ঢাকা চলে যায়,পথে থেকেই হয়তো কল দিয়েছে...
আধা মিনিটের কথোপকথনে যেটুকু জানলাম তা হলো,
কোনো কারণে আমি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত।সে আমার কল দিয়ে খোঁজ নিচ্ছে আমি ঠিক আছি
কিনা।কথা শেষে মোবাইলটা রাখতে গিয়ে ভাবলাম, সম্ভবত এরচেয়েও বড় উদ্দেশ্য হচ্ছে
আমাকে হাসি খুশি রাখা। আমি কিবোর্ড ছেড়ে ভেতরে জমে থাকা ইচ্ছে ঘুড়িটিকে ছেড়ে দিলাম।
ঘড়িতে সন্ধ্যা ছয়টা...
রাস্তা দিয়ে আসা যাওয়া করছে অসংখ্য যানবাহন।
ব্যাস্ত সড়কের চিত্রগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে
গাড়ির হেডলাইট ও ব্যাকলাইটের আলোয়। মাঝে কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। শহরের ব্যাস্ততা
ফুঁড়ে রাস্তার পাশে বসে আছি সেই অনেকগুলো বছরের পুরনো আমি। বাহিরে কত পরিবর্তন
আমার! অথচ ভেতরে? আমি ছেলেটা সম্পর্কে তো মন্তব্য করেই ফেলবে যে কেউ 'হাসি নাই কেন
আনিস!তেমনি স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে আমার অ্যাতোদিনে পুরাই সাইজ 'টু' প্যাক হয়েও হয়
নি,সারাদিনে খেয়েছি দুপুরে একটু। হবে কীভাবে?
একটি বছর। হ্যাঁ, একটা বছর আমার থেকে কিছু দিয়েই
চলে গেছে,হতাশ হলাম না, কিন্তু হতাশ না হয়েও পারলাম না। আমি কাকে চিনলাম,কাছের
মানুষ কে, দূরের মানুষ কে এগুলা ভাবলাম না, তবে লাস্ট কদিন মনে হলো না আমার পরিচিত
সবাই আমার খুব কাছের মানুষ।আমার সাথে ৩ সেকেন্ড আগে পরিচিত হওয়া মানুষটাও আমার
কাছের মানুষ।কাছের মানুষ বলতে এই না সে আমার দুপুরে ভাতের সাথে কি খেয়েছি তা জানার
সাহস রাখে।এখানে একটু থামাই,কোনো এক কালে একবার বলেছিলাম,আমার সাথে প্রতারণা করা
প্রতিটা মানুষ তাদের নিজেদের ক্ষত নিজেরা লুকাচ্ছে এবং লুকাবে; বরাবরের মতই এইবারও
একই কথা। আমার ভালোবাসা সচ্চ এবং সুন্দর।অনেক দামী,কেউ বুঝতে পেরেই এড়িয়ে যায় কেউ
মিশে ভালোবাসা নিতে গিয়েও পারে না,এইসব বলবো না।
আমি হয়তো ৩ বছর আগেও ভাবতাম, 'আচ্ছা জাফর ইকবাল
কে? কী করে উনি?' আমি ভাবতাম 'জাফর ইকবাল হলো একজন মাঝি। পদ্মার ঘাটে নৌকা চালায়।
সেই আমি এই বছরে ভার্সিটি থেকে আরেকটা বছর পার করে ফেলবো ভাবা যায়!
লক্ষ লক্ষ শব্দ কী-বোর্ড থেকে হারিয়ে
গেছে।জমানো আবেগ হারিয়ে গিয়েছে।প্রচন্ড মাথা ব্যাথা নিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়া
ভুলে গেছি।সময়ের কাজ সময়ে করা ভুলে গেছি।এইতো কিছুক্ষণ আগেও আম্মা বললো অনেক
পরিবর্তন হচ্ছিস আনিস,ঠিক হও...
দূর লিখবো না কিছু...
নতুন বছরে তো অনেক কিছুই আশা করি। সবচেয়ে বড়
আশা হলো, আমরা সবাই প্রিয়জন নিয়ে প্রিয়জন হয়ে যেনো থাকি হাসিখুশি, হানাহানি,
ভেদাভেদ, মিথ্যাকে ভুলে থাকি পাশাপাশি।
সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। হাহাহা... :3
Comments
Post a Comment